বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিদেশগামী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সে হারে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পিএফএম) সামিট-২৩-এ গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর থেকে আমরা ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আনতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমরা এ পরিস্থিতি ধরে রাখতে সক্ষম হইনি। এক কোটি মানুষ দেশের বাইরে কাজ করছে। প্রতি বছর এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের হার বাড়ছে না।’
তরুণ-যুবকরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবেন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তরুণরা অনেক সচেতন। অনেক তরুণ-যুবক বৃত্তি নিয়ে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হচ্ছেন। তাদের পরিবার দেশে। তাদের জন্য তো তারা অর্থ পাঠান। শ্রমিকরাও বৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছেন। রেমিট্যান্স আসার অনুপাত তো বিদেশে যাওয়া মানুষের যে হার, তার সঙ্গে মেলে না। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে হবে, খতিয়ে দেখতে হবে। বছরের শুরুর দিকে যেভাবে আসছিল, সেটা হঠাৎ কমতে শুরু করল কেন? দ্রুত রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সমাধানের পথ বের করতেই হবে। রেমিট্যান্স ঠিক তো, অর্থনীতিও ঠিক।’
রেমিট্যান্স কাঠামো সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞদের কাছে আমরা চমৎকার কিছু উদ্ভাবনী ও সংস্কারের পরামর্শ চাই। আপনারা রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে সংস্কারের প্রস্তাব দেন, আমাদের ভালো ভালো পরামর্শ দেন; আমরা তা গ্রহণ করব এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এ রেমিট্যান্সই দেশের বড় সমস্যা থেকে আমাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। এটা আমাদের বৈদেশিক বিনিময়ের সংকট কাটাতে সাহায্য করবে। আমাদের রাজস্ব আয় বাড়াতে সাহায্য করবে। এর জন্য আপনাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দপ্তরগুলো জানে না তাদের কাছে প্রকৃত কত সম্পদ রয়েছে। সেজন্য আগে সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। তারপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার গাইডলাইন প্রস্তুত করতে হবে। একই সঙ্গে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে।’
পিএফএম সামিটে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গভর্ন্যান্স গ্লোবাল প্র্যাকটিস দপ্তরের ব্যবস্থাপক হিশাম ওয়ালি বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থ সচিবরা পিএফএম সংস্কারের ক্ষেত্রে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিলেন সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান, ড. মোহাম্মদ তারেক, ফজলে কবীর, মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।