বাংলাদেশে গত অর্থবছরে যত প্রবাসী আয় এসেছে, তার ৫২ শতাংশই এসেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলায়। তবে প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ছয়টি জেলা। এর মধ্যে তিনটিই হলো পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি। অপর তিনটি জেলা হচ্ছে লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। সদ্য বিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে এ ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে বান্দরবানে—মাত্র ১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার।
এরপর রয়েছে লালমনিরহাট—এ জেলায় এসেছে ২ কোটি ডলার। এর বাইরে পঞ্চগড়ে এসেছে ২ কোটি ১১ লাখ, খাগড়াছড়িতে এসেছে ২ কোটি ৪৬ লাখ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ এবং রাঙামাটি জেলায় এসেছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এসব জেলা পিছিয়ে থাকলেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বান্দরবান, রাঙামাটি, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে আগের বছরের চেয়ে আয় আসা বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রবাসী আয় যেকোনো এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় একটি উৎস এ প্রবাসী আয়। তাই ডলার–সংকটের এ সময়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে নানামুখী চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসী আয়ের ব্যবহার নিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ের ৩৪ শতাংশ অর্থ ব্যবহৃত হয় প্রবাসীর পরিবারের খাদ্য ও বস্ত্রের পেছনে। ১৯ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা হয় আবাসন তথা জমি বা ফ্ল্যাট কেনায়। আর ১৮ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুর খামারে। ওই গবেষণায় বলা হয়, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনেও প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ কারণে প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে দেশের সব অঞ্চলে সুষম উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলো থেকে অধিকসংখ্যক মানুষকে বিদেশে প্রেরণে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এ জন্য সবার আগে দরকার বিদেশযাত্রার খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা।
পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সরকারিভাবে নানা ধরনের সহায়তা প্রদান এবং বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের পুনর্বাসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এসব কাজ করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে মেগা প্রকল্প বা উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।