বিশ্ব ব্যাংকের অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দরিদ্র ও মাঝারি আয়ের দেশগুলো ৬৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাবে, যা ২০২২ সালের চেয়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বব্যাংকের এই ভবিষ্যদ্বানি অনুসারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শ্লথগতি স্বত্ত্বেও চলতি বছরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোয় রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়েছিল ৬৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি ছিল।
২০২২ সালে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দেশ ছিল ভারত। এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি ১০০ বিলিয়ন রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছে মেক্সিকো। এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতি চীনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ বিলিয়ন ডলার। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ফিলিপাইনের রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ছিল ৩৮ কোটি ডলার। দক্ষিণ এশীয় দেশ পাকিস্তানে রেমিট্যান্স এসেছে ২৯ বিলিয়ন ডলার।
গত মার্চে পরিচালিত ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এক জরিপে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রতি চার অভিবাসী শ্রমিকের তিনজনই স্বদেশে রেমিট্যান্স বাড়ানোর আশা প্রকাশ করেছেন। নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশ থেকে আসা এসব অভিবাসী শ্রমিক স্বদেশে মূল্যস্ফীতি ও খানা ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবেলায় এমনটা করবেন বলে জানিয়েছেন।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের ৩০ হাজার ৬০০ ভোক্তার উপর পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছেন তিন-চতুর্থাংশ ভোক্তা। বিশ্বব্যাপী জীবনযাপন ব্যয় বৃদ্ধিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় তারা এমনটা করেছেন। এদিকে ৭৯ শতাংশ গ্রহীতা বলেন, চলতি বছরে তারা প্রবাসে প্রিয়জনদের কাছে অধিক অর্থ দাবি করবেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ভারতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ২৯ হাজার ও ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটির পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর অর্থনীতিতে শ্লথগতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের হাই-টেক খাতে অস্থিরতার প্রভাব পড়তে পারে রেমিট্যান্স প্রবাহে।
এদিকে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১১ দশমিক ৩ ও সাব-সাহারা অঞ্চলে ৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে রেমিট্যান্স।
বিশ্বের বেশকিছু দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে রেমিট্যান্স। এর মধ্যে শীর্ষ দেশগুলো হচ্ছে তাজিকিস্তান (জিডিপির ৫১ শতাংশ), টোঙ্গা (৪৪ শতাংশ), লেবানন (৩৬ শতাংশ), সামোয়া (৩৪ শতাংশ) ও কিরগিজ রিপাবলিক (৩১ শতাংশ)।