বিদেশিরা কি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন?

অর্থ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জরুরি। বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন কিনা, পারলেও সেটি কীভাবে, এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন আছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই লেখাটা লিখছি।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন গ্রাহকরাও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। যদিও মার্কিন নাগরিকদের তুলনায় তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আইডেনটিফিকেশন প্রয়োজন হতে পারে।

ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট অনুসারে ব্যাংক, ক্রেডিট ইউনিয়ন এবং আর্থিক খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে আগে গ্রাহকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে মার্কিন আইনপ্রণেতারা ২০০১ সালের  ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর এই নিয়ম জারি করেন। টুইন টাওয়ারে হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করেই তাদের হামলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবহার করেছিল।

কেউ যখন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়নে চেকিং বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করে, তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ও আইডি যাচাই-বাছাই করে। আপনি যদি মার্কিন নাগরিক না হন, তাহলে আপনার আইডিও মার্কিন নাগরিকদের মতো হবে না।

এটা মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়। তবে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েনকে’ এই সুযাগ দেয় না। ট্যাক্স পারপাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপটে ইউএস সিটিজেন অথবা ইউএস ন্যাশনাল নন, এমন সবাই ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন’। আবার যারা ‘উল্লেখযোগ্য সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি’ প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে গ্রিন কার্ডের আবেদনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তারাও ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন’।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কী লাগে?

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়নে অ্যাকাউন্ট খুলতে যেসব ডকুমেন্টস লাগতে পারে-

  • যোগাযোগের ঠিকানা। যেমন- নাম ও ফোন নাম্বার।
  • সরকার প্রদত্ত অন্তত দুটি আইডি। যেমন- ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পাসপোর্ট।
  • সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার অথবা ইনডিভিজ্যুয়াল ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (আইটিআইএন)। আপনি যদি মার্কিন নাগরিক না হন, তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আইটিআইএন লাগবে।
  • বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল।
  • ক্যাশ ডিপোজিট (সাধারণত ২৫-১০০ মার্কিন ডলার)।

তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক অনুসারে ডকুমেন্টসের চাহিদা ভিন্ন হতে পারে।

মার্কিন নাগরিক হোন বা না হোন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে অবশ্যই নূন্যতম বয়স ১৮ বছর বয়স হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি বসবাসের ঠিকানা থাকতে হবে। তবে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রেন্ট কিংবা যার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই কিংবা বিদেশে জন্ম নিয়েছেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আইটিআইএন নাম্বার এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা মার্কিন নাগরিক নন, তারা অনলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে গ্রাহকদেরকে স্বশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত থাকতে হয়। যেমন- স্যান্ট্যান্ডার ব্যাংক শুধু তাদেরই অনলাইন আবেদন গ্রহণ করে, যাদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার কিংবা আইটিআইএন নাম্বার আছে। এছাড়া, ব্যাংক অব আমেরিকা, টিডি ব্যাংক, চেজ ব্যাংক, ডিসকভার ব্যাংক, পিপলস ব্যাংকের মতো ব্যাংকগুলোতেও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায়। তবে আবারও বলছি, প্রতিটি ব্যংকেরই রিকোয়ারড ডকুমেন্টস ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

আইডির বিকল্প

মার্কিন নাগরিক নন, এমন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সাধারণত বিকল্প আইডেনটিফিকেশন গ্রহণ করে।

যেমন- আপনার যদি সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার না থাকে, তাহলে আপনি আইটিআইএন নাম্বার পেতে পারেন, যা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দ্য সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ৯ ডিজিটের একটি সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার প্রদান করে। আবার আইটিআইএন নাম্বার প্রদান করেন আইআরএস, এটিও ৯ ডিজিটের। শুধু সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার পাওয়ার অযোগ্য নির্দিষ্ট কিছু নন-রেসিডেন্ট বা রেসিডেন্ট এলিয়েন, তাদের স্বামী/স্ত্রী অথবা তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যাক্তিদেরকে আইটিআইএন দেওয়া হয়।

তবে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবার সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বারের বদলে আইটিআইএন গ্রহণ করে না। তবে ব্যাংকভেদে এই আইডেনটিফিকেশন রিকোয়ারমেন্টস ভিন্ন হতে পারে। যেমন- ব্যাংক অব আমেরিকায় অ্যাকাউন্ট খুলতে যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন-

প্রাথমিক আইডির জন্য নিচের যেকোনো একটি ডকুমেন্ট-

  • পাসপোর্ট ভিসাসহ বা ছাড়া
  • ইউএস নন-ইমিগ্রেন্ট ভিসা এবং বর্ডার ক্রসিং কার্ড
  • মেক্সিকান, গুয়েতেমালান, ডমিনিকান অথবা কলম্বিয়ান কনস্যুলার আইডি
  • কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট কার্ড

সেকেন্ডারি আইডির জন্য নিচের যেকোনো একটি ডকুমেন্ট-

  • যুক্তরাষ্ট্রের অথবা অন্য দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • মার্কিন সরকার প্রদত্ত ওয়ার্ক আইডি কার্ড অথবা ব্যাজ
  • ডেবিট কার্ড বা ভিসা ও মাস্টারকার্ডের ক্রেডিট কার্ড
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পরিচিত, এমন কোনো কোম্পানির রিটেইল ক্রেডিট কার্ড
  • ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইডি
  • মেক্সিকান ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্ড

কিছু কিছু ব্যাংক অমার্কিন নাগরিকদের জন্য এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গ্রহণ করে। এটি সাধারণত ৭-৯ ডিজিটের হয়ে থাকে, যা গ্রিন কার্ডের মতো ডকুমেন্টে থাকে।

কোন কোন ব্যাংক বিকল্প আইডি গ্রহণ করে

অনেক মার্কিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অমার্কিন নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিতে বিকল্প আইডি গ্রহণ করে। উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যাংক হচ্ছে- ব্যাংক অব আমেরিকা, চেজ ব্যাংক, টিডি ব্যাংক, এইএস ব্যাংক এবং ওয়েলস ফার্গো।

এ ছাড়া ‘ব্যাংকঅন’ প্ল্যাটফর্মে থাকা আরও একশ’রও বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসার জন্য বিকল্প আইডির মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়।

অমার্কিন নাগরিকদের জন্য বিকল্প অ্যাকাউন্ট কী

আপনি যদি মার্কিন নাগরিক না হন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার যোগ্য না হন, তাহলে কী করবেন?

* আপনি নিজ দেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যাংক বিদেশের ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। আপনি যদি এমন কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন, তাহলে সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বা সাহায্যে মার্কিন ব্যাংকিং সিস্টেমের সুবিধা উপভোগের সুযোগ পাবেন।।

* অফশোর বা ওভারসিজ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই অ্যাকাউন্টগুলোর ধরনটাই এমন যে আপনি নিজ দেশে অথবা যে দেশে বসবাস করেন, সে দেশের বাইরে অন্য দেশে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে এসব অ্যাকাউন্ডে অনেক বেশি পরিমান ডিপোজিট রাখতে হয়।

মর্কিন নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা অনেকটা সহজ হলেও, বিদেশিদের জন্য এটা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

সূত্র: ফোর্বস, ইউএসইমিগ্রেশন.ওআরজি, ওয়াইজ

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *