গত এক দশক প্রবাসী আয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ খাতে বড় বাঁক বদলের ঘটনা ঘটেছে। সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তাহি হলেও সেখান থেকে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমেছে। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এই বিপরীূত চিত্র নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এখনো বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি অোরব থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত এক দশকের চিত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের হার বেড়েছে, আর সৌদি আরব থেকে কমেছে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন এর অন্যতম বড় কারণ হুন্ডি। কারও কারও ধারণা, দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার সঙ্গে এই পরিবর্তনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ পাচার হওয়া অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে ফিরে আসছে। আর প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে অর্থ আনলে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনাও পাওয়া যায়।
সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ইউএই, যুক্তরাজ্য ও কুয়েত- এই পাঁচটি দেশ থেকেই এসেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ রেমিট্যান্স।
২০১২–১৩ অর্থবছরে দেশের মোট প্রবাসী আয়ের সাড়ে ২৬ শতাংশ এসেছিল শুধু সৌদি আরব থেকে। কিন্তু সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে সৌদি আরবের অংশ বা হিস্যা কমে সাড়ে ১৭ শতাংশে নেমেছে। পক্ষান্তরে, ২০১২–১৩ অর্থবছরে দেশের মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ১৩ শতাংশ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিন্তু সর্বশেষ অর্থবছরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। গত ১০ বছরে প্রবাসী আয়ে শতাংশের হিসাবে সৌদি আরব, ইউএই, ওমান, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের হিস্যা কমেছে। এর বিপরীতে কাতার, বাহরাইন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বেড়েছে।
যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়েছে
প্রবাসী আয়সংক্রান্ত লেনদেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈধভাবে দুই পন্থায় দেশে প্রবাসী আয় আসে। একটি সরাসরি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে। অন্যটি মুদ্রা লেনদেনকারী বিদেশি বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানো তুলনামূলক সহজ। এ কারণে আউটসোর্সিংয়ের বেশির ভাগ অর্থ এ দেশে আসে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে, যা একেবারে শেষ ধাপে ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। তাতে ব্যাংক থেকে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও মেলে।
ব্যাংকারদের আরেকটি অংশ বলছেন, দেশে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রবাসী আয়ের বিপরীতে সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় এই সুবিধা নিতে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ দেশে আনা হচ্ছে। পরে তা হয়তো আবার ঘুরেফিরে বিদেশ চলে যাচ্ছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, নব্বইয়ের দশকের পর যাঁরা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, তাঁদের অনেকেই সেখানে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত। তাঁদের একটি অংশ এখন দেশে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও সম্পত্তি কিনতে বড় অঙ্কের অর্থ পাঠাচ্ছেন। পাচার হওয়া অর্থেরও একটি অংশ হয়তো বাড়তি লাভের আশায় দেশে ফেরত আনা হচ্ছে। তাঁরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, তা মধ্যপ্রাচ্যে থাকা কয়েক হাজার লোক মিলেও পাঠাতে পারছেন না। কারণ, তাঁরা পেশায় শ্রমিক, যাঁদের আয়ও কম।ডলারের বাড়তি দামও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। এক বছর আগে ডলারের দাম ছিল মাত্র ৮৬ টাকা, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮.৫০ টাকায়। কেউ যদি এখন ১ লাখ ডলার দেশে পাঠান, তাহলে প্রণোদনা মিলিয়ে এক বছর আগের তুলনায় অন্তত ২৩ লাখ টাকা বেশি পাবেন।